ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে দীর্ঘ বিরতির পর আন্তর্জাতিক ফুটবলের প্রত্যাবর্তন স্মরণীয় করে রাখল বাংলাদেশ। হামজা চৌধুরী ও সোহেল রানার গোলে ভুটানকে ২-০ ব্যবধানে পরাজিত করে স্বাগতিকরা। এই জয় শুধু তিন পয়েন্টই এনে দেয়নি, ফিরিয়ে এনেছে দেশের ফুটবল অঙ্গনে নতুন আশার আলো।
ম্যাচের প্রথমার্ধ: হামজার অভিষেক গোল ও আধিপত্য:
খেলার শুরুতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। মাত্র ৬ মিনিটের মাথায় অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার নেওয়া কর্নার থেকে দর্শনীয় হেডে বল জালে জড়ান ইংল্যান্ড প্রবাসী মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী। জাতীয় দলের জার্সিতে এটি তাঁর প্রথম গোল। এই গোলের পর বাংলাদেশের আক্রমণের ধার আরও বেড়ে যায়। ৩২ মিনিটে আরেক অভিষিক্ত খেলোয়াড় ফাহামিদুল ইসলাম প্রতিপক্ষের রক্ষণে ভীতি ছড়ালেও তাঁর শট রুখে দেন ভুটানি গোলরক্ষক। প্রথমার্ধে বল দখল এবং আক্রমণে ভুটানের চেয়ে明显 (স্পষ্টতই) এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ।
কৌশলগত পরিবর্তন ও দ্বিতীয়ার্ধের গোল:
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা একাদশে তিনটি পরিবর্তন আনেন। হামজা চৌধুরী, জামাল ভূঁইয়া এবং কাজেম শাহের পরিবর্তে মাঠে নামেন যথাক্রমে হৃদয়, মোরছালিন এবং ইব্রাহিম। এই পরিবর্তনের সুফলও মেলে দ্রুত। ৪৮ মিনিটে মিডফিল্ডার সোহেল রানা প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া এক অসাধারণ শটে দলের পক্ষে দ্বিতীয় গোলটি করেন। এরপর রাকিব হোসেন ও ফাহিম গোলের সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি। অভিষিক্ত ফাহামিদুল ইসলাম পুরো ম্যাচে বেশ সপ্রতিভ ছিলেন।
আয়োজকদের ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি:
মাঠের খেলায় বাংলাদেশ উজ্জ্বলতা ছড়ালেও, মাঠের বাইরের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ঘাটতি ছিল চোখে পড়ার মতো। হ্যান্ডবল স্টেডিয়াম সংলগ্ন গেটে দর্শকদের ভিড় এবং বিশৃঙ্খলার কারণে অনেকে টিকিট থাকা সত্ত্বেও মাঠে প্রবেশ করতে পারেননি, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগীরা।
দর্শকের আবেগ ও নিরাপত্তা:
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। খেলা চলাকালীন সময়ে এক দর্শক নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে মাঠে ঢুকে পড়েন খেলোয়াড় হামজা চৌধুরীর সাথে ছবি তোলার উদ্দেশ্যে। নিরাপত্তা কর্মীরা দ্রুত তাঁকে সরিয়ে নিলেও, এই ঘটনা দর্শকদের আবেগ এবং একইসাথে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাও তুলে ধরে।
ফলাফল ও আগামীর প্রত্যাশা:
শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। গোলরক্ষক মিতুল মারমা শেষদিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেভ করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। প্রায় ১৫ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে এই জয় বাংলাদেশের ফুটবলকে নতুন উদ্দীপনা জোগাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলে পাঁচজন প্রবাসী ফুটবলার খেলেছেন, যা দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার একটি ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশ স্কোয়াড: মিতুল মারমা, সাদ উদ্দিন, তপু বর্মণ, তাজ উদ্দিন, তারিক কাজী, সোহেল রানা, হামজা চৌধুরী (হৃদয়), ফাহামিদুল ইসলাম (ফাহিম), জামাল ভূঁইয়া (মোরছালিন), কাজেম শাহ (ইব্রাহিম) ও রাকিব হোসেন (আল আমিন)। (পরিবর্তিত খেলোয়াড় ব্র্যাকেটে) For More